কমল সরকার,গৌরীপুর: ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) এক সঙ্গে পিতা শফিকুল ইসলাম (৩৫) ও তার পুত্র ছাত্র মুসায়েব সামান আম্মার (১০) দাফন সম্পন্ন। পিতা-পুত্রের বিদ্যাপীঠ ধোপাজাঙ্গালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সকাল ১১টায় জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাজে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোফাজ্জল হোসেন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানা, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানসহ হাজারো জনতা অংশ নেন। পরে নিজবাড়ির পাশে পারিবারিক গোরস্থানে পিতা-পুত্রের দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়।
বুধবার (৫ আগস্ট) সকাল ৬টায় দু’পুত্র ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র মুসায়েব সামান আম্মার ও ৩য় শ্রেণির ছাত্র মোঃ জিল জাওয়ান জিবাবীকে নিয়ে পিতা শফিক উচিতপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ময়মনসিংহ থেকে আসা ওস্তাদ মাওলানা মোঃ মাহফুজুর রহমানের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এ আনন্দভ্রমনে অংশ নেন তিনি। শফিকুল ইসলাম ধোপাজাঙ্গালিয়ার দু’মাদরাসার মোহতামিম। আবুল কালাম আজাদের ২ ছেলে ও ২ কন্যার মাঝে বড় ছেলে ছিলো শফিক। নেত্রকোনার মদন উপজেলায় পর্যটনকেন্দ্র মিনি কক্সবাজার নামে খ্যাত উচিতপুরের হাওরে ঘুরতে গিয়ে নৌকাডুবিতে ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। ১৮ লাশের সারিতে ছিলো শফিকুল ইসলাম ও তার বড় ছেলে মুসায়েব সামান আম্মার। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উচিতপুরের সামনে হাওর গোবিন্দশ্রী রাজালীকান্দা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাণহানির নিশ্চিত করেছেন ওসি রমিজুল হক।
ওইদিন রাত ১০টার দিকে পিকআপে পিতা-পুত্রের লাশ ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের ধোপাজাঙ্গালিয়া গ্রামে আসে। পিতা-পুত্রের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে শোকের মাতম শুরু হয়। বারবার মুর্ছা যান তার শফিকের বাবা আবুল কালাম আজাদ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার ছেলে আমার জানাযা দিবে, সেই আশায় হাফেজ মাওলানা পড়িয়েছি। এ আশা কেড়ে নিলো আল্লাহ।
অপরদিকে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দেয়ার জন্য রাতেই ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেঁজুতি ধর। তিনি এ সময়, পিতা-পুত্রের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের হাতে ৪০হাজার টাকার অনুদান তুলে দেন। ইউএনও পানিতে শিশুদের সতর্ক রাখতে ও করোনাকালীন এ সময়ে আনন্দভ্রমণে সবাইকে সর্তক থাকার অনুরোধ জানান। উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, এ মৃত্যুর সংবাদে পুরো উপজেলাকে শোকাবহ কওে তুলেছে। অনাকাঙ্খিত এ মৃত্যু শুধু পরিবার নয়, এলাকাবাসীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন দু’মাদরাসার শত শত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।