অধিকাংশ মানুষের ক্যারিয়ার গড়ার কারিগর সে নিজেই। সবারই স্বপ্ন থাকে ভালো কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করার। স্বপ্নের চাকরি পেতে সবাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনাও করে। তবে স্বপ্নকে ধরতে পারে না তাদের কিছু ব্যক্তিগত ও ভাবনাগত অভাবের ফলে। অভাবগুলো এতটাই তীব্র হয় যে, পুরোদমে বিকল করে দেয় ভেতরে পুষে রাখা লালিত স্বপ্নের চাকরির আকাক্সক্ষা। অনাকাক্সিক্ষত এসব অভাব জয় করেই আমাদের স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। ভালো ক্যারিয়ার গড়তে হলে অনেক বিষয়ই বিবেচ্য। ক্যারিয়ার গড়ার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিয়ে আলোচনা করা হল-
১. যে কোনো পরিস্থিতিতে শেখা চাই
পৃথিবী প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং সবাই ব্যবসায়ের নতুন নতুন পদ্ধতি বের করছে। যদি আপনি মনে করেন আপনার দক্ষতা অনেক বেশি এবং আপনার বর্তমান চাকরি অনেক ভালো তারপরও আপনাকে বর্তমান অবস্থানে থেকে সবকিছু ভালোভাবে শিখে নিতে হবে। কারণ আপনি যদি ভবিষ্যতে এর চেয়েও ভালো কিছু করতে চান সেক্ষেত্রে আপনার পূর্ব-দক্ষতা এবং জ্ঞান কাজে লাগবে।
২. শুনুন, জিজ্ঞাসা করুন এবং শিখুন :
কথায় আছে একজন ভালো শ্রোতা অনেক কিছু শিখতে পারে। তাই আপনার সহকর্মী, বস এবং গুরুজন যা বলে তা শুনুন। তাদের অভিজ্ঞতা এবং উপদেশ থেকে আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন। আপনার কাজ সম্পর্কিত যে যে বিষয়ে সমস্যা অনুধাবন করবেন, সে সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞেস করে সমাধান জেনে নিন। তাদের কাছ থেকে জেনে নিন কীভাবে আপনার ওপর অর্পিত কাজ সুন্দর করা যায়।
৩. বর্তমান কাজকে মূল্যায়ন করতে শিখুন
আপনার বর্তমান কাজই হতে পারে, আপনার ক্যারিয়ার শুরুর সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। এটা সত্য যে, খুব কম মানুষই এটা মেনে নেয়। কোনো কিছুই বিনাশ্রমে আসে না, যারা এটা মানে তারাই সফলকামী হয়। আপনি যদি আপনার বর্তমান কাজের সব দায়-দায়িত্ব আস্থার সঙ্গে পালন করেন, তাহলে এটাই হতে পারে আপনার নতুন ক্যারিয়ার বা ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়ার সিঁড়ি।
যখন যে কাজ আপনার ওপর অর্পিত হবে তা নির্দ্বিধায় করুন। কাজের মাধ্যমেই পারেন আপনি আপনার বসের তথা প্রতিষ্ঠানের আস্থা অর্জন করতে। তাই দেখা যেতে পারে, ভবিষ্যতে আপনার প্রতিষ্ঠানের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ সৃষ্টি হলে সেই পদের জন্য যোগ্যতার নিমিত্তে আপনাকে অগ্রাধিকার দেয়া হতে পারে।
৪. সম্পর্ক গড়ে তুলুন
আপনার ক্যারিয়ারের পরবর্তী ধাপ অনেকটা আপনার যোগাযোগের সম্পর্ক এবং সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে। আপনি কি জানেন শতকরা ৫০%-এরও বেশি চাকরি হয় জানা শোনা ও সম্পর্কের মাধ্যমে। আপনার সম্পর্কের জাল যদি বিস্তৃত হয়, তবে সেখান থেকে আপনি নতুন নতুন ব্যবসায়িক ধারণা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসংবলিত ধারণা পাবেন যা আপনার ক্যারিয়ারের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে। তাই নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে জেনে নিতে হবে তারা কেমন আছে, কী করে, ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী কী?
৫. কাজকে গ্রহণ করুন
আপনার বর্তমান কাজ সাদরে গ্রহণ করতে শিখুন। আগে নিশ্চিত হোন যে, আপনি আপনার কাজকে গ্রহণ করেছেন নাকি বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছেন। যদি শেষেরটি হয় তবে আপনার সময় এবং মেধা দুটোরই অপচয় হবে।
যখন আপনি একটি নতুন চাকরি শুরু করবেন, তখন আপনার কাজ, কাজের মূল্যায়ন এবং এ কাজের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আপনার সহকর্মী কিংবা ঊর্ধ্বতন কারও সঙ্গে আলাপ করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার ভেতরের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন হতেও পারে।
৬. আপনার কাজ সম্পর্কে নিশ্চিত হোন
আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তার আগে ভালোভাবে নিশ্চিত হয়ে নিন যে এটাই আপনার স্বপ্নের কাজ। আপনার স্বপ্নের কাজে সবকিছু আনন্দের সঙ্গে করতে ইচ্ছে হবে আর এর ব্যত্যয় হলে আপনি আনন্দ খুঁজে পাবেন না। আপনি কী ধরনের কাজ পছন্দ করেন? আপনি কি অন্য চাকরিজীবীদের দায়-দায়িত্ব নিতে পছন্দ কিংবা অপছন্দ করেন? আপনি কি প্রযুক্তি বা মানুষের সঙ্গে কাছ করতে পছন্দ করেন? আপনি নিজেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান? আপনি কি একজন অভিনেতা, ডিজাইনার বা দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হতে চান? নাকি ম্যানেজার হতে চান? আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়ার আগে আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিন।
৭. নিজেকে প্রস্তুত করুন
এক মুহূর্তও অপচয় নয়। আপনার জীবন বৃত্তান্ত এখন থেকে প্রতিনিয়ত আপডেট করুন। কালকেই হয়তোবা আপনার হাতের কাছে ধরা দিতে পারে আপনার স্বপ্নের চাকরি। তাই নিজেকে এবং নিজের জীবন বৃত্তান্ত যথোপযুক্তভাবে গড়ে তুলুন যাতে যে কোনো প্রতিষ্ঠান অনায়াসে আপনাকে নিয়োগ দেয়। যদি আপনি না জানেন কীভাবে সিভি লিখে এবং কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হয় তবে এখন থেকেই তা শিখতে চেষ্টা করুন।
৮. নমনীয়তা
উগ্রতা সর্বদাই খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। কোনো কাজই জোরপূর্বক করে নেয়া যায় না। আর জোরপূর্বক করে নেয়া হলেও পরবর্তীতে তার কুফল ভোগ করতেই হয়। তাই উগ্রতা নয়, নমনীয়তায় জীবন গড়াটাই যৌক্তিক।
৯. সহিষ্ণুতা
প্রবাদ আছে, ভালো জিনিস একটু দেরিতেই আসে। কোনো কাজেই তাড়াহুড়া করাটা ভালো না। ত্বরিত যে কোনো কাজের মধ্যে ভুল হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
১০. সময় সচেতনতা
প্রত্যেকটা মানুষেরই উচিত সময়ের সঠিক ব্যবহার করা। সময়ের কাজ সময়ে করতে পারলে যে কোনো ব্যক্তিই তার ক্যারিয়ারকে সফল স্থানে নিয়ে যেতে পারবে। অযথা সময় অপচয়কারী প্রয়োজনীয় সময় এসে হাঁপিয়ে ওঠে। ফলে সে তার কাজে ভুল করে। পরে করব বলে ফেলে রাখলে কোনো কাজেরই সফল সমাধান দেয়া সম্ভব নয়। তাই সময় সচেতন হয়ে উঠুন।