পাঠ : ০১ …………………..
এইতো কিছুক্ষন আগে-
আমাদের পাড়ার এক দাদা আকাশের দিকে তাকিয়ে আর্তনাদ করছে-
“হে প্রকৃতি! কেন শাস্তি দিচ্ছো? আজ পনেরো দিন। গৃহবন্দী আমি- আমরা -ওরা- তারা সকলেই। আর কতো?
– আলু আর চালের যোগানে বাচ্চার দুধের চাহিদা মেটেনা।
– মায়ের জন্য রোজ যে ওষুধ কেনা লাগে সেটা কে যোগাবে?
– বাবাকে চোখের ডাক্তার দেখানোর কথা ছিলো, দেখানো যাচ্ছে না।
– স্ত্রী কে কথা দেয়া ছিল, এ বৈশাখে কাচের চুঁড়ি কিনে দেবো। মেলায় যাবো একসাথে।
কেন এমন করছো তুমি? হে, প্রকৃতি! এবার থামো?”
দুম করে বৃষ্টি নেমে গেলো তখন। ধুম ধুম আওয়াজে চারপাশ ভারী হলো। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু করলো।
মানুষকে ঘরে থাকার ডাক নিয়ে পুলিশের গাড়িটি সাইরেন বাজিঁয়ে গেলো দাদার উপর দিয়েই।
তারপর কেঁপে কেঁপে এলো কিছু দৈব বানী-
” হে মানুষ, তোমাদের শিক্ষা হওয়া উচিত। আমার গায়ে বেচে থেকে তোমরা আমাকেই খেয়ে ফেলেছো। আমার ভূমিতে একের পর এক তুমি কারখানা গড়েছো। আমার মাটিতে চাপ দিয়ে বানানো অট্রালিকায় তুমি আকাশ ছুতে চেয়েছো। তোমার জন্য আমার বৃক্ষরাজি কাটা পড়েছে। তোমার কারখানার ধোয়ায় তুমি ভারী করেছো আমার বাতাস। আমার নদী তুমি ভরে দিয়েছো আবর্জনায়। আমার পাহাড় কেটে তুমি তাতে রাজত্ব গড়েছো। তোমার অত্যাচারে আমার বণ্য প্রাণিগুলো হারিয়েছে তাদের আবাস। আমার সমুদ্র তুমি প্লাস্টিক আর আবর্জনায় ভরে দিয়েছো। প্রকৃতি প্রেম আর পর্যটনের নামে তুমি আমাকে ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছো। আমার সমুদ্রের প্রাণগুলোকে তুমি কতো সহজে নিঃশেষ করে দিচ্ছো। আমার আকাশ, বাতাস, নদী, বন, প্রান্তর ও প্রাণ তোমার কাছে অসহায়।
– বলতে পারো? কেন প্রতিশোধ নিবোনা আমি? ঠিক আমার মতো তুমিও যখন ধুকে ধুকে মরবে তখন বুঝবে কতোটা যন্ত্রণা তুমি আমাকে দিয়েছো, দিচ্ছো।
– এই নিষ্প্রাণ শহরে-প্রান্তরে-গ্রামে-বন্দরে আজ আমি আবারো ফিরে পেয়েছি আমার রাজত্ব।
– এইতো কথা ছিল। তবে কেন এতো অভিযোগ তোমার? কেন আশা করছো চিরকাল আমায় কষ্ট দিয়ে তুমি সুখের সাম্রাজ্য গড়বে?”
দাদা প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পন করলো।
-আমরা আমাদের পাপ বুঝতে পেরেছি। আমাদের মুক্তি দাও। আমরা আবার তোমার সাথে মিলেমিশে বাচতে চাই।
– প্রকৃতি নৈঃশব্দে আবারো তার ঠিকানায় ফিরে গেলো। তার এই প্রতিশোধের শেষ কোথায় বলে গেলোনা।
দাদা চেয়ে রইলেন আকাশে
সন্ধ্যার আকাশে তখন কালো মেঘ
বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে দাদা।
ভিজে যাচ্ছে আমাদের চোখ।
পাঠ : ০২ …………………..
সুহৃদ,
বড় অস্থির সময়ের প্রতিনিধিত্ব করছি আমরা-
অপ্রত্যাশিত সময়ের অলিতে গলিতে অবিরাম হাঁটছি আমরা।
কথাগুলো শুনে হাসছো?
ভাবছো কি সাধারন অনর্থক কথা, তাইনা?
কিন্তু তুমিই বল এমন অন্ধকার সময়ের কথা কি ভেবেছো কখনো?
এই যে তুমি, রাত পেরিয়ে সকাল হলো তবু সকাল ছোঁতে পেলেনা-
দৌড় ঝাপের দিনের শুরু থেকে মুক্তি নিয়ে
চোখ গুলিয়ে ঘুমিয়ে গেলে এই সকালে
এমন সকাল কি সত্যিই তুমি চেয়েছিলে?
কি সময় এলো বলো-
দিনের আলোয় ঘুমাও তুমি, রাতের আধারে জাগো।
কি জানি কি ভার্চুয়াল সমাজে থেকে
হাতে হাত জড়ানো বন্ধুকেও তুমি দূরে সরিয়ে দিচ্ছো আজকাল, তাইনা?
এমন সময়ের কথা কি তুমি ভেবেছিলে কখনো?
সকালের চায়ে জুড়ে ছিল যে বন্ধু-
তাকে হাসিমুখে বলছো পৃথিবীর অসুখ না সাঁড়লে আর না হয় আসিসনা!
যে মায়ের হাতে যেকোন খাবার অমৃতসম ছিলো-
প্রতিবার খাবার সামনে আনতেই বলছো হাতটা ধুঁয়েছিলে সাবান জলে?
ভাঙনের এই সময়টার নাম কি অস্থিরতা নয়! এমন সময় কি ভেবেছিলে?
তবুও এই হতাশার সময়ে তোমার মুচকি হাসিটা বেশ প্রাণ দেয় আমায়-
এই যে আওয়াজ তুলে বলছো,
আর মাত্র কটা দিন?
আমরা ঘরে থাকলেই পৃথিবী সুস্থ হবে।
তারপর আবার….
আবার আমরা হাসবো
একসাথে ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে গল্প জুড়াবো-
সমাজভাঙা সময়গুলো কেমন ছিলাম!
গৃহের জেলে বন্দী থাকার গল্প হবে নতুন করে!
আবার আমরা পৃথিবীময় দাপিয়ে বেঁড়াবো।
আমি কিন্তু সেই সময়ে
ভাবছি বসে অন্য কথা
পৃথিবীটা সুস্থ হওয়ার প্রতীক্ষাতে
তোমার মতো এই পৃথিবীর মানুষগুলো
ঘরের কোনে আড়াল হয়ে থাকছে তো?
সমাজ ভাঙার মন্ত্র মেনে আবার হাসির স্বপ্ন নিয়ে দিনগুলো তারা গুনছে তো?
পাঠ : ০৩, চলবে …………………..
ইমন সরকার
উন্নয়নকর্মী ও পরিচালক, অন্যচিত্র উন্নয়ন সংস্থা, ময়মনসিংহ।
উপজেলা ডেভেলপমেন্ট ফ্যাসিলেটর অফিসার, স্থানীয় সরকার বিভাগ, এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
ইমেইল : [email protected]