কমল সরকার,গৌরীপুর : ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার দু’বারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা ও বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আব্দুল আলীর ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী (৪ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার বিভিন্ন কর্মসুচীর মাধ্যমে পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে পারিবারিকভাবে গ্রামের বাড়ি বোকাইনগরের কৃষ্ণপুর গ্রামে ফাতেহা পাঠ, দোয়া মাহফিল ও দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। এছাড়া বাদ জুম্মা গৌরীপুর পৌর এলাকাসহ বোকাইনগর ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক মসজিদে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে।
১৯৫০ সনে বোকাইনগর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া মরহুম আব্দুল আলী ছাত্র জীবন থেকেই সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, গৌরীপুর কলেজ ছাত্র সংসদের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৭ সালে তিনি পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হোন। ১৯৮৯ সালে প্রথমবার পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। সে সময় ভারতের বাবরী মসজিদ বিরোধে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে গৌরীপুর পৌর এলাকায় তিনি নিজে মাঠে অবস্থান নিয়ে কঠোরভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করেন। যে কারণে সাম্প্রদায়িক একটি গোষ্ঠী তার প্রতি বিরাগভাজন হলেও হিন্দু কমিউনিটির মাঝে তিনি স্থায়ী আসন করতে সক্ষম হন। এছাড়া তার অত্যন্ত সাদামাঠা জীবন-যাপনের কারণে অতি দরিদ্র শ্রেণির মানুষের খুব কাছের মানুষ ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনেও তিনি পরপর তিনবার সরাসরি কাউন্সিলরদের ভোটে গৌরীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন মরহুম আব্দুল আলী।
উত্তর ময়মনসিংহের ৭টি উপজেলা নিয়ে আলাদা জেলা করার দাবিতে গঠিত ‘গৌরীপুর জেলা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি’র আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। ব্যবসা ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী । গৌরীপুরে পরিবহন ব্যবসায় তিনি ছিলেন প্রথম ব্যাক্তি। গৌরীপুরের সর্বপ্রথম তার ক্রয় করা মিনিবাস দিয়েই এই উপজেলার মানুষ-জনের চলাচলের সুচনা হয়েছিলো। এছাড়া গৌরীপুরে ১৯৮৭ সালে প্রথম রাইস মিল তৈরি করেন তিনি। ২য় মেয়াদে চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তিনি দুর্ঘটনা রোধে পৌর এলাকার কেন্দ্রস্থল হারুণ পার্ক থেকে বাস স্টেশন স্থানান্তর, ২য় পৌর গোরস্থান জান্নাতুল বাকি, গৌরীপুর পৌর এলাকায় বিভিন্ন তহ বাজারে সেড নির্মাণসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। অত্যন্ত সহজ-সরল ও সাধারণ জীবন-যাপন করার কারনে সকলের প্রিয় এ মানুষটি ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৬ পুত্র সন্তান, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। মরহুমের ২য় সন্তান সাবেক প্রেসক্লাব সভাপতি ও সাপ্তাহিক রাজগৌরীপুর পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল হোসেন জুয়েল তার পিতার রুহের মাগফেরাত কামনায় সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।