কমল সরকার’গৌরীপুর : ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানার সাহসী অভিযানে ৫০ বছর পর অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে দখলমুক্ত হয়েছে সরকারের কড়েহা বিলের প্রায় ৬.৮৭একর সরকারী খাস সম্পদ। উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের চল্লিশা কড়েহা ও ধেরুয়া কড়েহা মৌজায় প্রায় ১৩ একর জায়গা নিয়ে বিশাল এই বিল। যার সরকারি অংশ ৬.৮৭ একর জায়গা দীর্ঘদিন বেদখল ছিলো। স্থানীয়ভাবে বিলটি কড়েহা বিল নামে পরিচিতি রয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে-মাওহা ইউনিয়নের চল্লিশা কড়েহা ও ধেরুয়া কড়েহা মৌজায় প্রায় ১৩ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত এই বিলটি প্রায় ৫০ বছর পুর্ব থেকেই মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুরুল হকসহ ১৮জন প্রভাবশালী ব্যাক্তি অবৈধভাবে বিলের জমি ভোগ-দখল করে আসছিলো। এর আগে সহকারী ভুমি কর্মকর্তা এই খাস জমি উদ্ধার করতে গিয়ে বার-বার বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এসিল্যান্ড মাসুদ রানা বিষয়টি অবগত হওয়ার পর থেকে বিলটি’র সরকারী অংশ উদ্ধার করতে মাঠে নামেন তিনি। তার সাহসী পদক্ষেপে প্রভাবশালী দখলদারদের উচ্ছেদ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয় সহকারী কমিশনার (ভুমি) মাসুদ রানাকে। অবশেষে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেঁজুতি ধর এর সহযোগিতায় সরকারের সম্পদ উদ্ধাওে সক্ষম হয় এসিল্যান্ড। ৫০ বছর পর অবৈধ দখল মুক্ত হয় সরকারের ৬.৮৭একর সম্পদ।
গৌরীপুরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাসুদ রানা জানান, একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পারেন উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের কড়েহা বিলে ১নং খাস খতিয়ানের ৬.৮৭ একর জমি রয়েছে । দীর্ঘ অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকারের এ জলমহালটি বেদখল অবস্থায় রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি সহকারী ভুমি কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দিতে বলেন। প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে দেখা যায় কড়েহা বিলের ৬একর ৮৭ শতাংশ ভূমি সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত রয়েছে। যাতে রয়েছে মোট ১৮ জন অবৈধভাবে দখলদার। সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত জলমহালটি দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অবৈধ দখলদার ১৮ জনকে নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশে উল্লেখ ছিলো, সরকারী জমির দখল না ছাড়লে’ দন্ডবিধি ১৮৬০ অনুযায়ী কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের এ আদেশ পেয়ে ১৬জন দখল ছেড়ে দেয়। পরে সরকারী সার্ভেয়ার এবং সহকারী ভুমি কর্মকর্তা দখল বুঝে নিতে গেলে অবৈধ দখলদার মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুরুল হক, তার ছেলে রফিক ও আব্দুল লতিফ তাদের বাঁধা দেয় এবং সীমানা নির্ধারণ করার জন্য যে খুঁটিগুলো পোতা হয় তা উপড়ে ফেলে দেয়। এক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের ও অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারী ভুমি কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ারের যৌথ স্বাক্ষরে এক প্রতিবেদন দাখিল করে । যেহেতু একজন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাই মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল রহিমকে বিষয়টি অবগত করা হয়। সাবেক কমান্ডার আব্দুর রহিম মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুরুল হককে নিয়ে ইউএনও সেঁজুতি ধর শুনানী গ্রহণ করেন। শুনানী শেষে এক পর্যায়ে দখলদার মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুরুল হক সরকারের জলমহালটি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিতে রাজি হয়। অবৈধ দখল মুক্ত হওয়ার পর পরেই জলমহালটিকে অতি দ্রæত সরকারের জলমহালের অন্তর্ভূক্ত করা হয় এবং ইজারা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারী জলমহাল হিসেবে ৩ বছরের জন্য ইজারা প্রদান করা যাবে ২০২১ সাল থেকে। বিলটি উদ্ধারের ফলে প্রতি তিন বছরে সরকারের প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় হবার সম্ভাবনা রয়েছে।