মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান৷ নহে দেশকাল পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি সবদেশে৷ সব কালে ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
এমন কথাই বলেছিল আমাদের বিদোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর (মানুষ) কবিতায়। আমরা সৃষ্টির সেরা জীব কারণ আমরা মানুষ। আমার জাতি হিসেবে সেরা বটে কারণ আমরা বাঙালি৷ আমাদের এদেশে অনেক গুনি মহাপুরুষ এর জন্ম হয়েছিল, যাদের জীবনভর সংগ্রাম ছিল আমাদের কে স্বাধীনতা দেবার । হ্যা আমার স্বাধীন হয়েছি বটে, কিন্তুু ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতার আমরা পাইনি। যদি পেতাম তাহলে হয়তো বার বার করে আবরার ফাহাদেরকে অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে হত না। আমার স্বাধীন হয়েছি ৪৮ বছর , আমাদের পূর্ব পুরুষদের কতো আত্মাদান, লক্ষ্য লক্ষ্য তাজা প্রান দিতে হয়েছিল এই স্বাধীনতার বিনিময়ে, কতো মার বুক খালি হয়েছিল, কতো সন্তান পিতৃ -মাতৃহীন হয়েছিল এই স্বাধীনতার জন্য, আজকে আমার স্বাধীন তবে এখন কোন স্বাধীনতার জন্য মায়ের বুক খালি হয়ে যাচ্ছে বার-বার? প্রতিদিন খবরের কাগজে, ফেসবুক কিংবা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম গুলোর মুখরোচক খবর হল (বুয়েট ছাত্র আবরার খুন, নিমমভাবে ছোট্ট শিশু তুহিন হত্যা, নুসরাত, তনু, সাগর, রুনি, অভিজিৎ আর নাই কিংবা ৪ বছরের শিশুকে ধষেণের পর খুন, সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা লাকি বেগম খুন) এমনতো হওয়ার কথা ছিল না যখন আমার স্বপ্ন দেখি আমাদের সন্তানরা একদিন আমাদের স্বপ্নের বড় হবে, তাদের কৃতিত্বের কথা থাকবে খবরে কাগজে -কাগজে, ছোট্ট শিশু তুহিন হাঁসির শব্দে আমরা হব বিমোহিত, নুসরাত, তনু একদিন সমাজকে পৃথিবীর দরবারে এগিয়ে নিয়ে যাবে, চার বছরের ছোট্ট শিশুটি হয়তো একদিন দেশ পরিচালনা করবে, বাইরের দেশ থেকে সুনাম বয়ে আনবে আবরার ফাহাদ। সবকিছু এখনো স্বপ্ন আমরা বার-বার করে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছি। আবরারে মায়ের আত্ননাদে, ছোট্ট তুহিনের বাঁচার জন্য আর্তচিৎকার কিংবা নুসরাতের শরিরের জ্বলন্ত আগুন বার বার করে বলছে আমরা কি মানুষ? এমন নিষ্ঠুরতা আমাদেরকে বাকরুদ্ধ করে ফেলেছে। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেধাবী ছাত্রকে তারি সহযোদ্ধা, বড়ভাই, পথপ্রদর্শক পিটিয়ে হত্যাকরে তখন আসলে বাকরুদ্ধ হওয়া ছাড়া কোন অবস্থা থাকে না।
ছবি লেখক : টগর হোড়, আমরা কি রূপ শিক্ষা প্রাপ্ত হচ্ছি যে স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ে একজন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করতে পারি, কোমলমতি শিশুদের উপর হিংস্র দানবের মতো করে হত্যা করতে পারি৷ আমরা এখন আন্দোলন করছি, এসব পশুদের বিচারের দাবি করছি খবরের কাগজে কলামে পর কলাম লিখছি এমন বর্বরতা কথা, ফেসবুকে নজরকাড়া পোষ্ট করছি কিন্তুু এতে করে কি সব কিছু বদলে যাবে, এমন ঘটনা কি আর ঘটবে না? এর কোন নিশ্চয়তা নেই, তবু প্রতিবাদ করতে হবে। কথাই কথা আসে আনেক কথাই হল, মূল কথা এই যে দিন শেষে আমাদের মনুষ্যত্বে বলি হয়েছে, আমাদের নেই কোন মানবিকতা, নেই মনুষ্য ধর্ম৷ আমরা কেবলমাত্র এখন এক ধরনের প্রাণী। আমাদের সমাজের একটা নীতি আছে সেটা রাজনীতি। আমাদের রাজনীতি এখন আর সমাজের উন্নয়ন কিংবা দেশের উন্নয়ন এর জন্যে না, নিজের উন্নয়ন এর জন্যে রাজনীতি। যতো দিন এই আত্মা কেন্দ্রীয় রাজনীতি থাকবে, ততোদিনে ঘরে ঘরে আবরার হত্যা হবে। আমরা যারা সমাজে বাস করি চলুন একটা নতুন বিপ্লব ঘটাই, আত্মা সুদ্ধির বিপ্লব। চলুন আমরা আমাদের আইন সম্মান করি, ভয় করতে শিখি। আসুন আমারা রাজনীতি করি সমাজের জন্য সমাজের মানুষের উন্নয়নের জন্য, আমরা আমাদের মানবিকতার বহিঃপ্রকাশ করি পৃথিবীর দরবারে। পৃথিবীর যেন আমাদের নতুন ভাবে আবার আবিস্কার করে। আমরা হানাহানি ভুলে যাই, ক্ষমতার জন্য আর একটি প্রান না যায় , অন্তরে ভালোবাসার জন্ম দেই। সমাজের সকল ধরনের অন্যায়ের প্রতিকার করি কাদে কাদ মিলিয়ে, আমাদের দেশের প্রচলিত আইন ব্যবস্তার উপর বিশ্বাস রাখি আর অপরাধের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক যেন আবার কেউ যেন এমন কাজ করায় আগে বারবার ভাবে৷ এখানে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা অপরিহার্য। তবেই এমন ঘটনা এড়ানো কিছুটা হলেও সম্ভব ।
লেখক : টগর হোড়, এক্সিকিউটিভ ফিনান্স,
অন্যচিত্র কারিগরি ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ময়মনসিংহ৷
//আর/জিরোফোর//