১. ছোট থেকে শুনে বড় হয়েছি “old is gold” কিন্তু কোথায় আজ আর কেউ এই সমাজের সেই গোল্ডকে মর্যাদা দেয় না। বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদি যাদের ছত্র ছায়ায় একদিন আমার বেড়ে উঠেছি, আজ কালের পরিবর্তনে আমাদের ছত্র ছায়া তাদের প্রয়োজন। কথায় আছে, একটি বয়স্ক বৃক্ষ ফল দান করতে না পারলেও ছায়া দান করতে পারে। তাই নিঃসন্দেহে প্রবীণরা আমাদের সম্পদ। যা আমাদের ভবিষ্যৎ পথ চলার আলোর দিশা, পথ প্রদর্শক।যদেরকে সামনে রেখে আমরা আমাদের আগামীর পথ চলতে সাহস পাই।
২. একজন প্রবীণের ভালে মন্দ সমস্যা বুঝতে হলে, আগে প্রবীণ হতে হবে নতুবা নিজেদের শিশুকালের কথা মনে করতে হবে। যখন আমরা শিশু ছিলাম, আমাদের কতটা যত্ন আর ভালোবাসা দরকার ছিল, ঠিক তেমনি প্রবীণদের প্রতি যত্ন আর ভালোবাসার হাত বাড়ানো জরুরী। আজ কাল প্রায়ই দেখা যায়, প্রবীণদের প্রতি নির্যাতন ও নিপীড়ন, আর এর মাত্রা বেড়েই চলেছে। এটা এখন একটি বৈষিক সামাজিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। যার দরুন সৃষ্টি হয়েছে বৃদ্ধাশ্রম ও নানা পারিবারিক অশান্তি। আর এই সব পারিবারিক অশান্তি ছড়িয়ে পরেছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে। মাদকাসক্ত, শিশু অপরাধ, পরিবার বিচ্ছেদ সহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ড জন্ম নিচ্ছে। এরূপ অশান্তি সমাজের জন্য মারাত্মক হানীকারক। প্রবীণদের প্রতি নির্যাতন ও অমানবিক ব্যবহার এই বিষয়টাকে আমাদের সমাজের অনেকেই মামুলি, গুরুত্বহীন এমনকি নিয়মিত স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করে৷ এই সমস্যা গুলো আমাদের মতো মানুষেরই সৃষ্টি। পিতা-মাতার সেবা করা সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব। পরিবারের সকলকে নিয়ে যৌথ পরিবার হিসেবে মানুষের বসবাস ছিলো পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই।সময়ের বিবর্তনের ফলে আজ সমাজ এসে দাড়িয়েছে “ছোট পরিবার সুখী পরিবার” এই নীতিতে কিন্তু মা-বাবা, দাদা-দাদি, কাকা-কাকি বা পরিবারের যে অন্য সদস্য গুলে থাকে তাদের সাথে নিয়ে একত্রে যৌথ পরিবারের যে আনন্দ, নৈতিক যে শিক্ষা পাওয়া যায় তা ছোট পরিবারের পাওয়া সম্ভব নয়।
৩. যাই হোক, মানুষ শিক্ষিত হবার পরেও যে নৈতিকতার অভাব মূল্যবোধের অভাব থেকে যায় সেটা স্পষ্ট আমাদের প্রবীণদের প্রতি নির্যাতন অবহেলা অযত্ন দেখে। প্রবীণদের প্রতি নির্যাতন যখন সামাজিক সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে তখন বাংলাদেশ সরকার সমস্যা অনুধাবন করে, পিতা-মাতা ভরণপোষণ আইন ২০১৩ পাশ করে। এই আইনে পিতা-মাতা, দাদা-দাদি, নানা-নানি ভরণপোষণ করা সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব ও এর অন্যথা হলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এটা হলো আইনের কথা। আইন দিয়ে তো জীবনের সব কিছু পরিমাপ করা যায় না।আইনের ভয়ে বাবা-মার দায়িত্ব পালন করা এমন সমাজ ব্যবস্থা আমাদের কাম্য নয়। আমরা এমন সমাজ চাই যেখানে মানুষ তার নৈতিক দায়িত্ব ও মূল্যবোধ নিয়ে বাঁচবে। বাবা-মার প্রতি ভালোবাসা প্রবীণ বয়সে তাদের পাশে থাকা।
৪. আমাদের স্কুল কলেজের নৈতিকতার শিক্ষা আরো দৃঢ় করতে হবে। সামাজিক বিভিন্নি সচেতনতা বাড়াতে হবে। আর সবচেয়ে বেশী যেটা দরকার সেটা হলো, প্রতিটি পরিবার থেকে শিশুদেরকে নৈতিকতা আর মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে৷ যাতে করে তারা নৈতিক মূল্যবোধের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে। পারিবারিক ঝগড়া অশান্তি থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে, যেনো শিশুদের উপর নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি সমাজে উচ্চপদস্থ ব্যাক্তি ও সরকারী আইন এর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলছি সবার সামান্য প্রচেষ্টাই এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তাই সকলে এগিয়ে আসুন, পারিবারিক অশান্তি দূর করি। সুস্থ সমাজ গড়ি। প্রবীণদের সুস্থ সুন্দর জীবন উপহার দেই।
লেখক : টগর হোড়
অর্থনীতি বিভাগ, চতুর্থ বর্ষ,
মুমিনুন্নিসা সরকারী মহিলা কলেজ ও সদস্য, অন্যচিত্র উন্নয়ন সংস্থা, ময়মনসিংহ৷