আমাদের সমাজে নানাবিধ ব্যধি রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি সামাজিক হচ্ছে বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ হচ্ছে একটি ছেলে বা মেয়ে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর পূর্বেই তাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার একটি প্রক্রিয়া। আমাদের দেশের গ্রামে বা শহরের বস্তিগুলোতে চরম দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারের মেয়েদের ১৫ বছরের পূর্বেই বিয়য়ে দেওয়া হয়। ছেলে বা মেয়ে উভয়েরই বাল্য বিয়ে হয়ে থাকে। তবে মেয়েদের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। দরিদ্র পরিবারগুলোতে তাদের পরিবারের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটও অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন করে। শিক্ষার অভাব এর জন্য প্রধানত দায়ী।
এর মধ্যে কিছুদিন যাবৎ লক্ষ্য করছি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় আসছে বিয়ের বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৬ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর করা হবে। এর যৌক্তিকতা কতটুকু? আমার জানা নেই। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রায় দুই বছর আগে আমরা দেখেছি ময়মনসিংহ এক সংসদীয় আসনের এমপি থাকা অবস্থায় অপ্রাপ্ত বয়সে দুই মেয়েকে এক সাথে বিয়ে দেওয়ার, দেখেছি সংসদের বিরোধী দলীয় প্রধান নেতাসহ মন্ত্রী, এমপি, ডিসি, এসপিসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বাল্য বিবাহ, যা প্রতিনিয়তই হচ্ছে৷ আমরা আরোও দেখছি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে ফোন দেওয়ার সাথে সাথে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা এবং অভিভাবকের ভাষ্য বাল্যবিবাহ অপরাধ তা জানা নেই৷ সমাজ ব্যবস্থায় একটি শিক্ষিত বা ক্ষমতাশালী পরিবারের একটি ছেলে বা মেয়ের বিয়ে সম্পর্কে কারো মাথা ব্যাথা নেই সেখানে একটি দরিদ্র পরিবারের ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য সমাজ অস্তির হয়ে পড়ে। এ কেমন ব্যবস্থা? আমাদের মূল্যবোধের যে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে এটা কি তারই প্রমাণ না?
মাদকের ভয়াবহতাও এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ছেলেরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। নানান অপরাধমুলক কাজের সাথে জড়িত হয়ে পড়ছে। তারাও অল্প বয়সে বিয়ে করছে। সংসারে নানা বিষয়ে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। দম্পতিদের মাঝে মতের মিল থাকে না। পরিণতি হয় বিচ্ছেদ, যা কাম্য নয়। তথাপি এসব ঘটনা অহর্নিশ ঘটে চলেছে। পত্র পত্রিকায় এমন কোন দিন বাকি নেই যেখানে ছাপা হয় না বাল্য বিয়ের কথা, ধর্ষণের কথা। প্রশাসন যদি জানতে পারে তবে হাতে গুনা কয়েকটা বিয়ে বন্ধ হয়। আর বাকি হাজার হাজার বাল্য বিয়ে হয়েই যাচ্ছে। আটকানোর কেউ নেই। এতে সমাজ দিন দিন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সোচ্চারের জন্য সরকারকে সহায়তা করার জন্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়ন সংস্থা গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজস্ব দায়বদ্ধতা থেকেই বিভিন্ন মহলকে সচেতন করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।প্রশাসনকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে “বাল্য বিবাহকে না বলুন, সুন্দর সমাজ গড়ে তুলুন” স্লোগানে কাজ করতে হবে৷
কাজ করতে হবে সমাজের সুষম আর্থিক স্বচ্ছলতা নিয়ে সম্প্রতি যেখানে জিকে শামীম, সম্রাট, সাঈদের ভোল্ট ভরা সম্পদের পাহাড়, সেখানে আর্থিক অস্বচ্ছলতা ভোগা মানুষগুলোর পরিবারেই বেশি বাল্য বিবাহ সংগঠিত হচ্ছে৷ দাড়াঁতে হবে মাদকের মত ব্যধিকে দূরীভূত করার জন্য৷
বাল্যবিবাহের কারণে নবদম্পতির স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে, রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়, নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়, ক্ষুধা মন্দা সৃষ্টি হয়, এছাড়াও দ্রুত বার্ধক্য চলে আসে। এরূপ অবস্থায় দুর্বল শিশুর জন্ম হয়, যা প্রসূতি ও নবজাতক শিশু উভয়েরই মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
বাল্যবিবাহ রোধে ধ্বংসাত্মক প্রথা বন্ধ করতে যথাযথ করতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ১৮ বছরের পূর্বে কোন কণ্যা সন্তান এবং ২১ বছরের পূর্বে কোন ছেলে সন্তানের বিয়ে দেয়া যাবে না। বাল্যবিয়েকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। মাদক পরিহার ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির আর্থিক স্বচ্ছলততা নিয়ে আসা, নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। শিক্ষার প্রসারের জন্য বর্তমান সরকার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- উপবৃত্তি প্রদান, বিনা মূল্যে বই বিতরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধিক নারী শিক্ষক নিয়োগ, অবৈতনিক শিক্ষা। সরকারের পাশাপাশি সামাজের দিক থেকে বাল্যবিবাহ নামক ব্যধি দূর করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক :
মোহাম্মদ সুমন মিয়া
ব্যবস্থাপনা বিভাগ, আনন্দমোহন কলেজ ও সদস্য অন্যচিত্র যুব পরিষদ, ময়মনসিংহ৷