সম্প্রতি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রণোদনায় আয় নাটকের অঙ্গনে শীর্ষক প্রতিপাদ্যে নতুন নাটকের উৎসব ২০১৯ এ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডমীর জাতীয় নাট্যশালায় প্রদর্শিত হলো বায়োগ্রাফিক্যাল নাক রাধারমণ।
সুনাগন্জ প্রসেনিয়াম ও বন্ধন থিয়েটারের যৌথ প্রযোজনাটির নির্দেশক শামীম সাগর।
দুই ঘন্টা দশ মিনিট ব্যাপ্তির এ নাটকে রাধারমণের সামগ্রিক জীবন ও দর্শনের একটি প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে প্রাণান্ত চেস্টা করেছেন পুরো টিম।বিশাল ক্যানভাস আর দীর্ঘ ব্যাপ্তির নাটক হলেও প্রযোজনাটি তার মৌলিক আবেদন হারায়নি। ঐতিহ্যবাহী বাঙলা নাট্যের বর্ণনাত্বক ধারায় নাটকের বয়ানে রাধারমণের জীবন ভিত্তিক বৈচিত্রময় আখ্যানের সূচনা হয় বন্দনা গীতের ছন্দে,গীতল ছন্দধর্মী পরিবেশনায় নাট্য শিল্পীদের সুর বিচ্ছিন্নতা বা একটু ডিসটিউন গান ধরায় প্রথমদিকে ছন্দপতন ঘটতে গিয়েও তা সুকৌশলে ওভারকাম করে নেয় গীত বাদ্য শিল্পীরা।আখ্যাণ বর্ণনায় প্রমিত বাংলা রীতি ব্যবহৃত হলেও প্রথম দিকে কথকের উচ্চারণগত সীমাবদ্ধতা ও শব্দ প্রক্ষেপণ কানে লেগেছে।
কিশোর রাধারমণ চরিত্র রুপদানকারীর ক্ষেত্রে সেটি প্রবল ছিলো।তবে প্রতিটি চরিত্রের সংলাপ সুনাগন্জের আন্ঞলিক ভাষায় হবার ফলে একটি ভিন্ন মাত্রিক মৃত্তিকা সংলগ্ন ছোঁয়া পাওয়া গেছে।রাধারমণের সামগ্রিক জীবন বোধ ও দর্শন কে সীমিত সময়ের ক্যানভাসে তুলে আনা সত্যিই দুরুহ ব্যাপার তবে তার সংগীত জীবনের ব্যাপক ও বিস্তৃত দিকটি নাটকে আরো উপস্হিত হলে মন্দ হত না।সব থেকে ভালো লাগার বিষয় যেটি রাধারমণ ও হাছন রাজার যে অাত্মিক সম্পর্ক সেটির ইন্টার টেক্সচুয়াল প্রদর্শন নাটকের মানকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।পুরো প্রযোজনায় ঘাটু গান,ধামাইল গান ও অন্যান্য লোকজ সুর প্রাণবন্ত করেছে প্রযোজনাটিকে।প
রমাত্মার সাথে জীবত্মার নিগূঢ় আধ্যাত্মবাদী সাধনা ও রাধারমণের কৃষ্ণ প্রাপ্তি এবং নিজে একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষরুপে সার্বজনীন হয়ে উঠার সরল বর্ণনা কখনও কখনও নাটকের গতিকে তীব্র থেকে তীব্র করতে সমর্থ হয়েছে।
লোকজ প্রপস ও বাঁশ,কাপড়,হারিক্যান ব্যাবহারের ভিন্নমাত্রিকতা নুতন স্বাদ এনে দিয়েছে।মেঠোসুর ও গীতল ছন্দের এ প্রযোজনায় রাধারমণের গান গুলো আরো সুরে গাওয়ার চেস্টা থাকা উচিৎ বলে মনে করি।চলন,ছন্দ ও দেহভঙ্গিমায় আরো উচ্ছল আভা থাকলে আরো প্রাণবন্ত হতে পারত এ প্রযোজনা।তবে দীর্ঘ দশ ঘন্টার জার্নি ও ক্লান্তি পারফরর্মাদের এনার্জি কিছু কিছু জায়গায় ব্যাহত করেছে।অধিকাংশ নাট্যশিল্পীরা নবীন হলেও তাদের অভিনয় দক্ষতার সূদূরপ্রসারী আভাস কিন্তু দিতে সক্ষম হয়েছেন।প্র
থম প্রদর্শনী হিসেবে সার্থক একটি মমঞ্চায়ন হয়েছে রাধারমণের।নাটকের আখ্যাণ,বয়ান,ডিজাইন,পোশাক,আলোক পরিকল্পনার সারল্য নাটকের মানকে উন্নত করেছে।নির্দেশক সফল।।
সাধারন দর্শক একপ্রকার ঘোরে ছিলেন এটিই বিশাল প্রাপ্তি এ প্রযোজনার।বায়োগ্রাফিক্যাল নাট্যচর্চার সুবাতাস বয়ে যাক,মফস্বলের নাট্যদল গুলোর গুণগত কাজের বিকাশ ঘটুক এটিই সময়ের চাওয়া।
( লেখক: শিল্পী,শিক্ষক ও গবেষক )