দীর্ঘদিন পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর পথে যাতায়াতের সময় বাণিজ্যিক জাহাজসমূহ দ্রব্যসামগ্রীর সাথে কিছু ঘোড়াসহ সাগর পাড়ি দিত। তখনকার সময়ে জাহাজ খুব বেশি গতিসম্পন্ন ছিলনা। তাছাড়া সাগরে সারাবছর বরফাচ্ছন্ন থাকার কারণে জাহাজের গতি হ্রাস পেতো। তাই সাগর পাড়ি দিতে অনেক সময় লাগতো। এক সময় খাবারের মজুদ কমে যেতো। তখন নিজেদের খাবার সাশ্রয় ও জাহাজ সচল রাখার জন্য কিছু সংখ্যক ঘোড়া সাগরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিক্ষেপ করা হতো। এভাবে চলতে থাকে বহুকাল। তারপর প্রথাগতভাবে ঐ স্থানের নামকরণ হয় অশ্ব অক্ষাংশ।
পৃথিবী কত নয়নাভিরাম! অপরূপ সুন্দর্য্যের মাঝেও বিচ্ছেদ ও নিক্ষেপের বহুরূপ বিদ্যমান। সময়ের পরিক্রমায় পরিবারের স্বরূপ পরিবর্তিত হচ্ছে। সমাজে বিভাজন লক্ষনীয় হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সম্পর্কগুলো ফিকে হচ্ছে দিনকে দিন। আইনের শাসন উপেক্ষিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক মহামারির প্রাদুর্ভাবে মৃত্যুপুরীতে রূপায়িত হয়েছে জগৎ সংসার। দুর্যোগের সময়েও নষ্টামি, ভণ্ডামি, চুরিচামারি বন্ধ হয়নি। ত্রাণসামগ্রী লোপাট ব্যাপকভাবে সয়লাভ করেছে।
বেদনার্ত সমাজের প্রেক্ষাপট! প্রতিনিয়ত মানুষের মন নিচুতর হচ্ছে। কু-ধারণা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে ইন্ধন দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে অহমিকার বীজ অঙ্কুরিত হচ্ছে। দূরত্ব বাড়ছে এবং মনে সঞ্চিত হচ্ছে বিষ। এই বিষক্রিয়া সবক্ষত্রে। খাদ্যে ভেজাল তার মধ্যে অন্যতম। ইদানিং, সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, নৈরাজ্য, অস্থিরতা,বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর আগ্রাসনের বলয়ে পৃথিবী একক মালিকানাদিন দৃশ্যত প্রতিয়মান হচ্ছে। তাই তো ক্ষমতার জন্য মাটিকামড়ানো প্রচেষ্টা অযাচিত ভাবে বেড়েই চলেছে। এক কথায়, সমাজপতিদের মধ্যে অশুভ ছায়া পরেছে।
পরিবার নামক জাহাজে তরঙ্গের খেলা চলে। এ খেলা চলবে কত দিন? পরিবার স্নেহ, মায়া, ভালবাসার অকৃত্রিম বন্ধনের পরিচায়ক। মা পরিবারে অন্যতম। গত পহেলা বৈশাখ, ১৪২৭ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত “মাকে করোনা সন্দেহে বনে ফেলে গেলো সন্তানেরা” শিরোনামে খবরটি হৃদয়কে ব্যাথায় মরিয়া করে তুলেছে। পরিবারে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। মায়ের মমতাময়ী মুখনিঃসৃত হাসি অনাবিল আনন্দ দেয়। যা সীমাহীন আকাশকে ছাড়িয়ে যায়। আবার মায়ের বেদনাহত মুখ অসীম কষ্ট দেয়। আজ পরিবারে মা অবহেলার বস্তুতে পরিণত হয়েছে। তাই তো কুলাঙ্গার সন্তানেরা মাকে বনে ফেলে যাতে পারে। চারদিকে বেদনার নদী বহমান। কত শত মা পরিবার হারা। কেউ আছে বৃদ্ধাশ্রমে। কেউ ফুটপাতে আশ্রয় নিয়েছে। জীর্ণশীর্ণ অতিকায় জীবনযাপন। পালহীন অকুল দরিয়ায় হাবু-ডোবি।
কিছু জিজ্ঞাস হৃদয়কে ব্যবচ্ছেদ করে। আর করুন সুরে বেজে উঠে, মা কেন বৃদ্ধ হয়? তোমার সন্তানরা কি বৃদ্ধ হবে না? সত্যিকথা বলতে, মায়ের অভুক্ত মুখ, অতৃপ্ত চোখ সন্তানের জন্য মঙ্গলজনক নয়। আমরা তো নিত্যদিন ধ্বংসের অতলে তলিয়ে যাচ্ছি। অগ্নিপক্ষে ভস্ম হচ্ছি। তাই তো অনুভূতি মৃত্যুপথযাত্রী। আমাদের শিক্ষা,আদর্শ, মূল্যবোধ বিলুপ্তপ্রায়। স্থবিরতা আমাদের আক্রান্ত করেছে। সজীবতার অভিনেয় আর কত কাল? যে সন্তানের আস্ফালনে মায়ের নির্বাসন হয়, সে কি মানুষ? এমন কুলাঙ্গার কাম্য নয়। এমন পাষণ্ড সন্তান কেন জন্মক্ষণে নিঃশ্বাসহীন হলো না। জাতি লজ্জিত। বিবেকের কাঠগড়ায় নতজানু। বারবার অন্তরাত্মা নির্বিকার হয়ে যায়। আর ভাবি, এ কেমন বিবর্ণ মনুষ্যত্ব। মহান আল্লাহ্ আমাদের জ্ঞানশূন্য অবস্থা থেকে উত্তরণ করুক। আমীন।
আল ইমরান মুক্তা
শিক্ষানবিশ আইনজীবী, জর্জ কোর্ট, ময়মনসিংহ ও
সদস্য, অন্যচিত্র উন্নয়ন সংস্থা, ময়মনসিংহ।
imran@onnochitra.org