যৌতুক কোনো মেয়ের বিয়েতে বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন এমনকি অনাত্মীয় অতিথি অভ্যাগতরা যেসব উপহার দেন তাকেই বলে যৌতুক। কাজেই যৌতুক হলো ঐ উপহার যা মেয়েকে তার বিয়েতে স্বজন-পরিজন ও অনাত্মীয় অতিথিরা সাধারণত স্বেচ্ছায় দিয়ে থাকে যাতে করে সে তার স্বামীর বাড়িতে এগুলো নিজের ইচ্ছামত তার সুবিধার্থে ও মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করতে পারে। হিন্দু আইনে যৌতুককে নারীর সম্পত্তির অন্যতম উৎস বলে উল্লেখ করা আছে, যে সম্পত্তি কোনো নারী তার স্বামীর সম্মতি ব্যতিরেকে হস্তান্তরের নিরঙ্কুশ অধিকার রাখেন। ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকেই এই রীতি চলে আসছে। যৌতুক প্রথার অভিশাপ বাংলাদেশের হিন্দু ও মুসলিম উভয় সমাজে এতটাই সংক্রমিত হয়েছে যে তা উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে দারিদ্রের সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
আইনে যৌতুক গ্রহণ বা প্রদানকে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে যার জন্য ন্যূনতম এক বছর ও সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল কিংবা জরিমানা হতে পারে অথবা উভয়বিধ শাস্তি দেয়া যেতে পারে। আইনে যৌতুক দেয়া বা নেয়ার জন্য যে সাজার ব্যবস্থা রয়েছে যৌতুক দাবি করার জন্যও সেই একই সাজার বিধান রাখা হয়েছে। এর পরও তা উপেক্ষা করে দেয়া নেয়া হচ্ছে। যৌতুক প্রথার অভিশাপ মোকাবিলায় সরকার এতসব কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরও যৌতুক প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি; বরং তা বেড়েই চলছে এবং এই অভিশাপের যারা শিকার তাদের অর্থনৈতিক কাঠামোকে কুঁড়ে কুঁড়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, যৌতুকের দাবি মেটাতে না পেরে নিরপরাধ গৃহবধূরা শারীরিক নির্যাতন ভোগ করছে। কখনও বা মারাত্মক জখমও হচ্ছে, এমনকি খুনও হয়ে যাচ্ছে।
আমরা প্রত্যেকেই আমাদের অবস্থান থেকে সোচ্চার হলে আশা রাখি এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাই আসুন, যৌতুক প্রথার কুফল সম্পর্কে নিজে জানি, অন্যকে জানাই।
এর প্রতিকারে কাজ করতে হবে নিজের পরিবার থেকে।
লেখক : মোহাম্মদ সুমন মিয়া, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, আনন্দমোহন কলেজ ও
সদস্য, অন্যচিত্র যুব পরিষদ, ময়মনসিংহ৷
//আর/জিরোফোর//