অনলাইন ডেস্ক : ভারত-চীন তৃতীয় সেনা বৈঠকেও সমাধানসূত্র অধরা রইল। দুই দেশের কোর কমান্ডার পর্যায়ের তৃতীয় বৈঠকে গতকাল মঙ্গলবার বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হলেও মে মাসে চীনা সৈন্যদের অবস্থান যেখানে ছিল, সেখান থেকে সরে যেতে তাঁরা রাজি হননি। ফলে অচলাবস্থা অব্যাহত। চীন শুধু তার অবস্থানে অনড় নয়, গালওয়ানে যেসব স্থানে অবস্থানের দরুন তারা বিতর্ক বাড়িয়েছে, সেখানকার ঘাঁটিগুলো তারা ক্রমেই পোক্ত করে ফেলেছে। সেনা উপস্থিতিও বাড়িয়ে দিয়েছে। আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেনা সমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারতও। স্থল ও বিমানবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্যাংগং লেকে নজরদারিও বাড়ানো হচ্ছে। সে জন্য অতিরিক্ত বিশেষ জলযান নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, পূর্ব লাদাখের পাশাপাশি পাকিস্তান সীমান্তেও নজরদারি ও সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। সেনা গোয়েন্দাদের খবর, উত্তেজনা বাড়লে দুই সীমান্তেই ভারতকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়াতে হতে পারে। এই সূত্রের খবর, পাকিস্তান সম্প্রতি কাশ্মীর ও পাঞ্জাব সীমান্তে অতিরিক্ত ২০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে।
সেনা সূত্রে বলা হয়েছে, ভারত কোনো সীমান্তেই নিজে থেকে আগ্রাসী হবে না। তবে আক্রান্ত হলে যোগ্য জবাব দিতে তিন বাহিনীই প্রস্তুত। চীনের সামরিক পেশি আস্ফালনের মোকাবিলায় ভারত অর্থনৈতিক আঙিনাতেও চীনবিরোধী অবস্থান ক্রমে বাড়িয়ে তুলছে। সরকারিভাবে ৫৯টি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে। ওই একই কারণে ৫-জি স্পেকট্রামে চীনা সংস্থা হুয়াউকে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। টেলিকম শিল্পের দরজা চীনা সংস্থার জন্য বন্ধ করা হচ্ছে। বুধবার কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন, হাইওয়ে ও ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পমন্ত্রী নিতিন গড়কড়ি সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, দেশে হাইওয়ে প্রকল্পগুলো চীনা সংস্থার জন্য নিষিদ্ধ করা হবে। যেসব ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে চীনা সংস্থার যোগসাজশ রয়েছে, সেই ধরনের সংস্থাও এসব প্রকল্পে অংশ নিতে পারবে না। তিনি বলেন, ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে চীনা লগ্নি যাতে না আসে, সরকার তা নিশ্চিত করবে।
ভারত-চীন দ্বিপক্ষীয় বার্ষিক বাণিজ্যের মোট পরিমাণ প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভারতের রপ্তানি ২০ বিলিয়নেরও কম। বাকি সবটাই চীন থেকে আমদানি। অর্থনীতির এই অতিমাত্রায় চীননির্ভরতা কমিয়ে ভারতকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইতিমধ্যেই এই আহ্বান সাড়া ফেলেছে। রাজ্যে রাজ্যে চীনা পণ্য বয়কটের আন্দোলন জোরালো হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের বোঝানো হচ্ছে চীনা পণ্যের বিকিকিনি বন্ধ করতে। বিকল্প উপায়ের খোঁজের পাশাপাশি দেশি উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমগুলো এই ক্ষেত্রে অতি সক্রিয়। চীন ইতিমধ্যেই ভারতের এই অতি সক্রিয়তা নিয়ে মুখ খুলেছে। দলীয় নেতাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অসন্তুষ্ট চীন বিভিন্নভাবে এই মনোভাবের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবে। সেনাবাহিনীও সম্ভাব্য প্রত্যাঘাত নিয়ে সতর্ক।