হিন্দু আইনে বিবাহ আট প্রকার। রাক্ষস বিবাহ একটি। বহুকাল আগে সনাতনধর্মের কিছু সংখ্যক প্রভাবশালী ও কুচরিত্রের ব্যক্তিবর্গ অনৈতিক ভাবে নারীদের তুলে নিয়ে ব্যভিচার করতো। তখন বিবাহিত নারীরাও বাদ যেতোনা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সমাজপতিগণ বিবাহিত নারীদের সনাক্ত করার লক্ষ্যে শাঁখা -সিঁদুর এর প্রচলন শুরু করেন। এখন পর্যন্ত এই প্রথা হিন্দু সমাজে প্রচলিত আছে। তাছাড়া সামাজিক প্রচলন হিসেবে কোন কোন পরিবারে সদ্য বিবাহিত নারীদের হাতে বালা ও কানে দুল ছাড়া বাহিরে যেতে বারণ।
অনেকে এসব প্রথা অন্ধের মত বিশ্বাস করেন।কেউ কেউ মনে করেন, এগুলো অনুসরণ না করলে স্বামীর অকল্যাণ হবে। কিন্তু এতো নিয়ম সত্বেও কেন নারী আজ নিজ গৃহেও ধর্ষিত হচ্ছে? নোয়াখালী গৃহবধূ তার অন্যতম উদাহরণ। সিলেটে এমসি কলেজে হয়ে গেল অভিনব কায়দায় বর্বরতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে এসব ভিডিও। প্রতিনিয়ত পাষণ্ড মানুষের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। সমাজ তো রসাতলে! অপরাধীরা কি সহজে রেহাই পেয়ে যাবে?
সমাজের কপালে কুঠারাঘাত! অশিক্ষা, কুশিক্ষা মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবাহিত। বিবেকহীন উচ্চাভিলাস রমরমা। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও অপশক্তির উত্থান। মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের কুচকাওয়াজে চারদিক সরগরম। এতো নষ্ট! নষ্ট সমাজের পথে! তাকে আলিঙ্গন করে আত্মহারা অতিউৎসাহী তরুণ সমাজ। কারো অদক্ষতায়, অযোগ্যদের পদায়। এভাবে সমাজের রশিতে টান পড়ে। শৃঙ্খল সমাজের স্থলে বিশৃঙ্খলা স্থান করে নেয়। বলা বাহুল, সম্পর্কের মাঝে বিপরীত সম্পর্ক বিরাজমান। ইদানিং কিছু সম্পর্কের মাঝে বিবর্ণ রূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ছদ্মবেশে হাত দরাদরি করে চলে হায়েনার রূপ। ঊষার গণনেও চেনা কঠিন। স্বার্থের কাঠগড়ায় প্রতিটি মানুষ। মিথ্যার অন্তরালে সত্যের বসবাস।
সাম্প্রতিক শুধু ধর্ষণ নয়, গণধর্ষণও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুলতঃ নোংরা সমাজ ব্যবস্থার ফলে করুন পরিণতি। অপ্রিয় হলেও সত্য, সমাজ জ্ঞানহীন বিত্তের কবলে। আবার দুর্জন বিদ্যানের স্বার্থের কারণে বিক্রি।
আজ-কাল মানুষকে বড় অচেনা লাগে। মুখোশ চরিত্রের প্রণয়ে বন্দী হয়েছে মানুষের স্বরূপ। দিনদিন আত্মমর্যাদা মাটিতে ধূলিসাৎ হবার পথে। পশুর ন্যায় উদ্ধত আচরণ তার প্রমাণ। প্রতি মুহূর্তে লালসা অস্থিমজ্জায় আগ্রাসন চালাছে। বিজাতীয় সংস্কৃতি নষ্টামীর দিকে প্রলুব্ধ করছে। এদিকে ধর্মহীনের রোষানলের স্বীকার সমাজকর্ম। দুর্দান্ত গতিতে চলছে অশুভ প্রতিযোগিতা। মন পাড়ায় কতশত জিজ্ঞাসা হামাগুড়ি করে। নিবৃত্তে কাঁদে বিহঙ্গ বাঁশি। আর বলে উঠে মন-প্রাণ, এটাই কি আমাদের প্রকৃত চরিত্র? এতো দেখি, মানবিকতার বিপর্যয়। মূল্যবোধ এর লুন্ঠন। এভাবে একটি জাতিস্বত্তা নিশ্চিন্তে চলতে কিভাবে?
বিবাহিত-অবিবাহিত উভয় প্রকার নারী ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে। নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বারবার। সমাজের অসভ্য চিত্র দিবালোকের মত স্পষ্ট। তাই ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে আইন সংশোধন সময়ের প্রয়োজন। পরিশেষে, ধর্ষণের মত বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড বন্ধ হোক। চাই সুন্দর বসতি। চাই ধর্ষণহীন বাংলাদেশ। প্রত্যাশা করি, সুস্থ ও নিরাপদ সমাজ।
লেখকঃ মোঃ আল ইমরান মুক্তা
প্রধান শিক্ষক, এনটিটি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল, গৌরীপুর, ময়মনসিংহ।
ইমেইল : imran@onnochitra.org