মানুষভেদে ধর্মান্ধতা যেমন প্রকট, ধর্মহীনতাও তেমনি চরমভাবে লক্ষনীয়। তারপরও সত্য অসত্যের ভিড়ে ধার্মিকের সংখ্যা কম হবে না বটে। সালাত ইসলামের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা জানি বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের সরকার বিজ্ঞ আলেমদের সাথে পরামর্শ করে বিশেষ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। উল্লেখ্য বিজ্ঞ আলেমগণ ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। বিজ্ঞ আলেমগণ এই দুর্যোগকালীন সময় মসজিদের পরিবর্তে নিজ ঘরে সালাত আদায়ের ব্যাপারে মতামত প্রদান করেছেন। যাতে বেশি মানুষের সমাগম না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখার কথাও বলেছেন। কেননা, ইসলাম দুর্যোগকালীন সময়ে সাবধানতা অবলম্বনের পথ অনুসরণ করতে বলে।
আমাদের দেশের অনেকেই এ বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছে। যারা সালাত আদায় করেন, তাদের মাঝে দ্বিধাবিভক্ত অবস্থা বিরাজ করছে। অন্যদিকে যারা কখনও সালাত আদায় করেনা তাদের সমালোচনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সত্যিকথা বলতে কি? আমরা নিজের খেয়াল খুশি মত সব কিছু বিশ্লেষণ করতে চাই। কিন্তু যথার্থ জ্ঞানকোষ থেকে তালাশ করি না। অথচ পবিত্র গ্রন্থসমূহে এর বিশদ ব্যাখ্যা রয়েছে। তদুপরি অযথা মন্তব্য করি এবং বৈরিতা তৈরিকরণে পাকামি করি। তবে মনে রাখা উচিৎ, পাকামিরও একটা সীমা আছে। পাকলে যেমন পূর্ণতা আসে, আবার বেশি পাকলে পচে যায়। অপরিপক্ব অবস্থায় পাকলে মিষ্টতার পরিবর্তে পানসে হয়ে যায়। তাই পূর্ণতা কাম্য। অপরিপক্বতা বা পচে যাওয়া নয়।
ইতোপূর্বে পবিত্র গ্রন্থসমূহে স্থান, কাল, পাত্রভেদে বিভিন্ন বিষয়ের করণীয় সম্পর্কে উল্লেখ আছে। সময়োপযোগী কার্যাবলীর বিষয়ে বিভিন্ন বিকল্প পন্থা অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাদের কি হলো?আমরা আংশিক জেনে বিতর্কে জরিয়ে পরি। কখনও সংঘাতের সূত্রপাত করি। নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে যা সুবিধাজনক মনে হয়, তাই সঠিক বলে ধারণা করি। অবশ্য আমরা কিছু বিষয়ে জ্ঞান রাখি। তবে অনেক বিষয়ে উপযুক্ত জ্ঞান রাখি না। আমরা কখনও আবেগের তারনায় জ্ঞানহীনতাকে আলিঙ্গন করি। তখন কেবল জানা বিষয়কে অবলম্ব করে, অজানাকে উপেক্ষা করে চলি।
মানুষের প্রকৃতি বিচিত্র! সমাজে সুযোগসন্ধানী মানুষে ভরপুর। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ প্রেষণা দ্বারা চালিত হয়। মানুষ যা প্রত্যাশা করে সেই ফসল ঘরে তুলতে চায়। সত্যিকার অর্থে, আমরা কি, কিভাবে এবং কতটুকু জানতে চাই সেটা নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গির উপর।
পরিশেষ বলবো, আসুন আমরা সচেতন হই। অন্যদের সচেতন করি। নিজেরা ঘরে অবস্থান করি এবং অন্যকে উৎসাহিত করি। পাপাচার, অশ্লীলতা, নাফরমানি পরিত্যাগ করে চলি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজগৃহে জামাতের সহিত সালাত আদায় করি। আর মহান আল্লাহ্’র দরবারে কায়মনোবাক্যে পানাহ চাই। আল্লাহ্ আমাদের ক্ষমা করুন। আমাদের সঠিক বুঝ দিন। আলোর পথ দেখান। আমীন।
আল ইমরান মুক্তা
শিক্ষানবিশ আইনজীবী, জর্জ কোর্ট, ময়মনসিংহ ও
সদস্য, অন্যচিত্র উন্নয়ন সংস্থা, ময়মনসিংহ।
imran@onnochitra.org